হাটহাজারী প্রতিনিধি : করোনা ভাইরাসের (COVID- 19) ভয়াবহতার মুখে আজ পুরো বিশ্বের মানুষ নিজ গৃহে বন্দি জীবনে বাধ্য হচ্ছে। জারি করা হয়েছে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা। ভাইরাসটাতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৫লাখ সাতানব্বই হাজার ২৬৭ জন। যার মধ্যে ২৭হাজার ৩৬৫ জন মারা যান।
করোনার এই পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার (২৭ মার্চ) জুমু’আর নামাযের পূর্বে দেশ ও জাতির উদ্দেশ্যে দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার কেন্দ্রীয় বায়তুল কারীম জামে মসজিদে ইসলামের বিধান ও স্বাস্থ্য সচেতনতার ওপর দিকনির্দেশনামূলক বয়ান করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
কুরআন-সুন্নাহর আলোকে প্রদত্ত বয়ানে সূরা আহযাবের ৪৩ নং আয়াত তিলাওয়াত করে তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তায়া’লা পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন-তিনি মুমিনদের প্রতি পরম দয়ালু। আল্লাহ তায়া’লা অত্যন্ত দয়া-মায়া করে আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়া’লা তাঁর মায়া-মমতার একশ ভাগের একভাগ সমস্ত সৃষ্টি জীবের মাঝে বন্টন করে দিয়েছেন আর বাকি ৯৯ ভাগ রোজ হাসরের নিজের কাছে জমা রেখে দিয়েছেন। এই এক ভাগ পেয়েই সৃষ্টি জীব পরস্পরের মধ্যে একে অপরকে মায়া-মমতা করে। মায়া মোহাব্বতের বান্দারা যখন আল্লাহ তায়া’লার অবাধ্যতা আর নাফরমানী করে তখন আল্লাহ তায়া’লা রাগান্বিত হন। বিভিন্ন আযাব-গযব ও বালামুসিবত দিয়ে বান্দাকে গুনাহ ছেড়ে তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার সংকেত দেন। তাওবা করে গুনাহ ক্ষমা চেয়ে আল্লাহ তায়ালার দিকে তা প্রত্যাবর্তনের আহবান করেন। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা নুহ এর ১০ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।
আল্লামা বাবুনগরী বলেন,বর্তমানে আমাদের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলসহ সর্বক্ষেত্রে শুধু গুনাহ আর গুনাহ। হয়ত এসব গুনাহের কারণেই আজ করোনা ভাইরাসের মতো এই মহামারি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। গুনাহের কারণে আল্লাহ তায়া’লা বান্দাকে আযাব গযবে নিপতিত করেন। সূরা শুরার ৩০ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- আল্লাহ তায়া’লা বলেন, ‘‘তোমাদের ওপর যেসব বিপদ আপদ পতিত হয় তা তোমাদের কর্মেরই ফল। এবং তিনি তোমাদের অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন।’’ সূরা সেজদা ২১ নং আয়াত-আল্লাহ তায়া’লা বলেন, ‘‘গুরু শাস্তির পূর্বে আমি অবশ্যই তাদেরকে লঘু শাস্তি আস্বাদন করাবো। যাতে তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে।’’ সূরা আনকাবুতের ৪০ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘‘আমি প্রত্যেককেই তার অপরাধের কারনে পাকড়াও করেছি।’’ সুতরাং বর্তমান সময়ের এই মহামারি গুনাহেরই ফসল।
বর্তমান সবচে বড় আল্লাহর নাফরমানি হলো আল্লাহর নাজিলকৃত ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র,ইসলামকে নির্মূল করার অপচেষ্টা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের উপর জুলুম নির্যাতন। নামায কাযা করা, সুদ-ঘুষ,আত্মসাৎ,হাইজ্যাক চাঁদাবাজী, সন্ত্রাস,বেপর্দা,নাচগান ইত্যাদি। তাই নাজুক মুহূর্তে যাবতীয় গুনাহ পরিত্যাগ করে খাঁটি দিলে তাওবা করে আল্লাহ তায়া’লার দিকে রুজু হতে হবে।
তিনি বলেন, কেহ করোনাভাইরাসে বা অন্য কোনো রোগে অসুস্থ হলে সে মসজিদে আসবে না। এই মহামারিতে কোনো মুসলমান মারা গেলে সে অবশ্যই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের হাদিস অনুযায়ী শহীদ হবে। তাকে ইসলামি বিধানানুযায়ী জানাযা ও দাফন কাফন করতে হবে। দুঃখজনকভাবে বলতে হয় আজ ৯০% মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশে টিভি টকশোতে করোনায় আক্রান্তদের লাশ আগুনে পুড়ে ফেলার দাবি করা হচ্ছে। এমন কথা মেনে নেওয়া যায় না। মুসলমানের লাশ আগুনে পুড়ার কথা বলে চরম ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে। লাশ আগুনে পুড়ে ফেলা হিন্দুয়ানী রীতিনীতি। এবং মুসলমানদের জন্য ইহা হারাম। ঢালাওভাবে করোনায় মৃতদের লাশ আগুনে পুড়ার কথা বলে ওরা মূলত এদেশকে হিন্দুয়ানী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে।
আল্লামা বাবুনগরী বলেন, হক্কানী ওলামায়ে কেরাম দেশ ও জাতির ঈমান আকিদা রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী। জাতির কর্ণধার। বর্তমান এই নাজুক মুহূর্তে ওলামায়ে কেরাম কুরআন সুন্নাহর আলোকে জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শন করতে হবে। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে করণীয় ও বর্জনীয় ঠিক করে দিতে হবে।
ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রোগীর দেখাশোনা ও সেবা-শুশ্রূষাও একটি ইবাদত। রোগীদেরকে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। এখলাছ ও নিষ্ঠার সাথে সেবার মহৎ কাজ করলে আল্লাহ তায়া’লার নিকট এর উত্তম বিনিময় পাওয়া যাবে।
আল্লামা বাবুনগরী বলেন,আমরা সরকারের নির্দেশ অবশ্যই মানব ৷ কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ আরো হাজারগুণ মানতে হবে। তাই গুনাহ ছেড়ে দিয়ে পূর্বকৃত পাপকাজ থেকে তাওবা করে আল্লাহ তায়া’লার দিকে ফিরে আসতে হবে। এবং শর’ঈ বিধানকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার,স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অভিজ্ঞ ডাক্তাররা যেসব পরামর্শ দেন তা যথাযথ ভাবে মেনে চলতে হবে। আল্লাহ আমাদের এই মহামারি থেকে মুক্তি দিন। আমিন ৷