কোয়ারেন্টিনের সময়গুলো |
সময়গুলো মূল্যবান। সারা বছর অন্যান্য দিনগুলি খুবই ব্যস্ততায় কাটে। অথচ গত এক সপ্তাহ ধরে অবসরে আছেন। আমি জানি কোন কাজ ব্যতিত ঘরে বসে থাকা একজন কর্ম ব্যস্ত মানুষের নিকট কতটা কঠিন ব্যাপারটা। তাছাড়া বাইরের আবহাওয়া বলেও তো একটা কথা আছে। অন্যান্যদিনগুলো নিছক হাওয়া খেতে হলেও বের হতেন সেটা যতসামান্য হলেও তাতেই আত্মতুষ্টি মিলত। আচ্ছা, এই থমকে যাওয়া, লকড-ডাউন, কোয়ারেন্টিন ইত্যাদির সাথে আপনি কিংবা আমি কেউই পরিচিত নয়। হাঠাৎ ই গোটা পৃথিবীর সব দেশ, শহর, গ্রাম তার স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফলেছে। মানুষগুলো হারিয়েছে তাদের অস্থিরতা। এমনটি হবার কথা ছিল না।
আল্লাহ আযযা ওয়া জাল আমাদের উপর না-খোশ হয়ে আছেন। এই মূল্যবান সময়গুলো আর যা ই করি তাঁকে একটু সময় দিই। সিজদাহে মাথাটা জায়নামজে লুটিয়ে দিয়ে পাহাড় সমপরিমাণ গুনাহগুলোর জন্য কাঁদতে মন চাই না? আচ্ছা পুরো দিন তো আপনাকে সালাত আদায় করতে বলা হচ্ছে না বরং পুরো ২৪ ঘন্টার মাত্র ১ ঘন্টা ব্যয় করে আপনি পাঁচ ওয়াক্তের সালাত সুন্দরভাবে আদায় করতে পারেন। এই তো গেল সালাতের কথা। বাদ বাকি সময়গুলোও বেহুদা নষ্ট না করে খুব সুন্দর এবং প্রোডাক্টিভ কাজে ব্যয় করতে পারেন। [কিছু আইডিয়া শেয়ার করছি যদি কারো উপকারে আসে]
পুরোদিনকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে নিতে পারেন। যেমন সকালের সময়টাতে কি করবেন, বিকেলের সময়টা, সন্ধ্যা এবং রাতে যা যা করবেন তার পূর্ব পরিকল্পনা করে নিতে পারেন। কারণ পরিকল্পিত কাজগুলো পরবর্তীতে করতে আপনার জন্য সহজ হবে এতে আপনার কাজের একটা লক্ষ্য থাকবে ও নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হাশিলের পথে আগাতে পারবেন (ইন শা আল্লাহ)।
টিপস-১ ( উপকারী বই পড়া) :
এই মূল্যবান সময়টা আপনি জ্ঞানার্জনে ব্যয় করার ব্রত নিতে পারেন। যেহেতু এই সময়টা বাইরের কোন চিন্তা মাথায় আসবে না (অফিস, পড়ালেখার বাড়তি চাপ) তাই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনার মনযোগ ধরে রাখতে পারবেন। ইসলামিক ধাঁচের বইগুলো অধ্যয়ন করতে পারেন।
কি ধরনের বই পড়বেন?
সীরাহ, কোরআনের তাফসীর, সাহাবাদের জীবনী। তাছাড়া আপনি চাইলে আপনার পছন্দের যেকোন ইসলামিক বই পড়তে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার পঠিত বইগুলো যেন শুধু পড়ে শেষ করার উদ্দেশ্য না হয় বরং তা থেকে শিক্ষণীয় উপকারী জ্ঞান যেন বাস্তব জীবনেও প্রতিফলিত হয়। চাইলে নির্দিষ্ট লক্ষ্য সেট করে এই দিনগুলোতে আপনার পড়ার একটা সিডিউল বানিয়ে নিতে পারেন আপনার সুবিধা অনুযায়ী।
টিপস-২ (কোরআন তিলাওয়াত) :
অন্যান্য সময় (ব্যস্ততার কারণে) হয়তো কোরআন পড়তে পারেন না। চাইলে এই অল্প ক'দিনে কোরআন তেলাওয়াতের অভ্যাস তৈরি করতে পারেন।
ফজরের পরে কয়েক পৃষ্ঠা কোরআন তিলাওয়াত করে অন্তরকে পরিশুদ্ধ নিতে পারেন। ইন শা আল্লাহ —আল্লাহ চাইলে এই অভ্যাস কন্টিনিউ হতে থাকবে। অবসরে সুমধুর তিলাওয়াত শোনে হৃদয়কে প্রশান্ত করে নিতে পারেন।
টিপস-৩ ( পরিবারকে সময় দেয়া) :
আপনার ব্যয়কৃত সময়গুলোর একটা অংশে আপনার পরিবারের হক আছে। এই সুযোগে তাদের হক আদায় করে নিন। তাদের সাথে বিভিন্ন দ্বীনি আলোচনাসহ পরিবারের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলুন। বিবাহিত ভাই-বোনেরা আপনারা দ্বীনি হালকা করতে পারেন। ভাইয়েরা স্ত্রীর কাজে সাহায্যের মাধ্যমে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু' আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাহ আদায় করে নিতে পারেন।
টিপস-৪ (লেখালেখি) :
যারা লিখেন, এই সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়ন করে আপনারা নোটে লিখে রাখতে পারেন। সময় নিয়ে গবেষণামূলক লেখাগুলোকে আরো সুন্দর এবং গভীর আলোচনায় সাজাতে পারেন।
ব্যক্তিগত টাইমস্ স্পেন্টের পাশাপাশি আমাদের দেশ ও জাতিকে নিয়েও চিন্তা করতে হবে। কারণ আল্লাহ'র রাসূল (সাল্লাল্লাহু' আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“মুসলিমেরা সকলে মিলে একটি দেহের মতো, যার চোখে ব্যথা হলে গোটা দেহের কষ্ট হয়, মাথায় ব্যথা হলেও গোটা দেহের কষ্ট হয়।” (সহীহ মুসলিম : ২৫৮৬)
আপনি হয়তো ঘরে পর্যাপ্ত খাবার মজুদ রেখে, পরিবারকে নিয়ে শান্তিতে, নিশ্চিন্তে আরো কয়েক মাস কাটিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন আপনার সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষদের কথা? যারা দিন এনে দিন খায়। ভেবেছন কি বাসার কাজের লোকটির কথা কিংবা গরীব প্রতিবেশিদের কথা? তাদেরকে অনাহারে রেখে আপনি কিভাবে সুখে উদর পূর্তি করবেন? দেশের এই সংকটাপন্ন অবস্থাতে তাদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়া কি আপনার মূখ্য কর্তব্য নয়? উল্লেখ্য হাদিসটি রিমাইন্ডার হিশেবে দেয়া। আমরা কি প্রকৃত মু'মিন হব না?
এই তো গেল মুসলিম হিশেবে অপর মুসলিমের প্রতি আপনার হক। এই বিপর্যয়ের মুহূর্তে ইসলাম বলে 'দান-সাদাক্বাহ' করতে। কারণ তিরমিজির একটি হাদিসে আল্লাহ'র রাসূল (সাল্লাল্লাহু' আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“নিশ্চয় দান-সাদাক্বাহ (মানুষের) পাপাচারের কারণে আল্লাহর গজবের যে আগুন সৃষ্টি হয় তাকে নিভিয়ে দেয়; যেভাবে আগুন পানিকে নিভিয়ে দেয়।” (তিরমিজি)
আমি আগেই বলেছি বিশ্বব্যাপি এই মহামারী আমাদের হাতের কামায়। আমাদের কৃতকর্মের ফল। আল্লাহ আযযা ওয়া জাল আমাদের উপর রেগে আছেন। আমরা কি এখনো আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা'র রাগকে নিবারন করবো না। আসুন স্ব-স্ব অবস্থান থেকে দান-সাদাক্বায়ের হাতকে প্রসস্থ করি। এই সময়ের দানের মাধ্যমে দুস্থ অসহায়দের সাহায্য ও আল্লাহ নৈকট্য উভয় ই হাশিল হবে (ইন শা আল্লাহ)।
দান কিংবা সাদাক্বাহ নিয়ে আল্লাহ'র রাসূলের (সাল্লাল্লাহু' আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি হাদিস রয়েছে। তিনি বলেন, “দান কর একটি খেজুর দিয়ে হলেও।..” (সহীহ বুখারী)
সুতরাং বুঝা গেল দান শুধু বিত্তশালীরাই অঢেল টাকা পয়সা দিয়ে করবে এমনটি নয় বরং আল্লাহ'র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আপনার যতসামান্য কিছু দানও আল্লাহ কবুল করবে (ইন শা আল্লাহ)।
[পরিশেষে কে কিভাবে হোম কোয়ারেন্টিনের সময়গুলো কাটাচ্ছেন অবশ্যই জানাবেন। ইন শা আল্লাহ নতুন কিছু আইডিয়া পাওয়া যাবে।]
সমাপ্ত
লেখাঃ সিয়াম ভূঁইয়া (আল্লাহ্ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)